জলবায়ু পরিবর্তন জনিত সমস্যা

ভুমিকাঃ-
বাংলাদেশের জন্য জলবায়ু পরিবর্তন জনিত সমস্যা একটি বড় সমস্যা। বাংলাদেশের মত উন্নয়নশীল ও উন্নত দেশেও জলবায়ু পরিবর্তন জনিত সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। নওগাঁ জেলার সাপাহার ও পোরশা উপজেলা একটি কৃষি প্রধান এলাকা হিসাবে পরিচিত। অথচ এখানকার কৃষি ব্যবস্থা প্রকৃতি নির্ভর। এই এলাকায় খরা একটি প্রধানতম দুর্যোগ হিসাবে বিবেচিত। খরার প্রভাবে এখানকার কৃষি ব্যবস্থা বিপর্যস্ত। খরা এলাকার লোকজনদের জীবিকাকে মারাত্বক হুমকির মুখে পতিত করেছে। ফসলহানীর কারনে জমির মালিকরা তাদের জমিতে আম বাগানের প্রসার ঘটিয়ে চলেছে ফলে আবাদী জমির পরিমান দিন দিন কমে আসছে। বর্গাচাষী ও গরীব দিনমজুর শ্রেণীর লোকজনরা হয়ে পড়ছে বেকার, ঋণগ্রস্থ ও এলাকা ছাড়া। গরীব অসহায় নারীরা খাদ্য সংকটসহ পুষ্টিহীনতায় ভোগে অস্থি চর্মসার হয়ে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলছে। খরার কারনে খাবার ও গোসলের পানির সংকট তাদের জীবন ধারনকে করে তুলেছে বিপর্যস্ত। নিয়মিত গোসল ও পর্যাপ্ত পানি খেতে না পারার কারনে তারা নিয়মিতভাবে রোগে আক্রান্ত হচ্ছে এবং স্বাস্থ্য সমস্যার নূন্যতম সমাধান করতে গিয়েতাদের কষ্টার্জিত অর্থ ব্যয়করে দিন দিন নিঃস্ব ও ঋণগ্রস্থ হচ্ছে। পরিবারে অভাব অনটন বৃদ্ধি পাচ্ছে। ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া থেকে শুরু করে তাদের ব্যবহারের নূন্যতম পোষাক পরিচ্ছেদের দিতে পারছে না। অনেক কিশোরী মেয়ে ও নারীরা ভাল পোষাকের অভাবে বাড়ীর বাইরে কোথাও যেতে পারে না। আর্থিক ও স্বাস্থ্য সচেতনতার অভাব জনিত কারনে তারা খোলা জায়গায় পায়খানা করে। যার ফলশ্রæতিতে মানুষের মৌলিক চাহিদা যেমনঃ খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা, চিকিৎসার সমাধান সুদুর পরাহিত হওয়ার কারনে দিন দিন মানুষ হয়ে পড়ছে দরিদ্র ও নিঃস্ব। এ অবস্থা থেকে এলাকার লোকজনদের রক্ষা করতে না পারলে এই এলাকা অদুর ভবিষ্যতে বিরান ভূমিতে পরিণত হবে এই আশংকায় এলাকার লোকজন শংকিত। এছাড়াও এই এলাকার লোকজনদের মৌসুমী বেকারত্ব, কৃষি জমিতে আম বাগান, স্যানিটেশন সমস্যা, স্বাস্থ্যগত সমস্যা, জমির মালিকদের দৌরাত্ব, বর্গাচাষের অসম নিয়মনীতি, বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ না থাকা, আগাম শ্রম বিক্রি, মহিলাদের কাজের সুযোগ কম থাকা, পর্যাপ্ত সরকারী সেবার ব্যবস্থা না থাকা, ভূমির অসম বন্টন ব্যবস্থা, উন্নত কৃষির সুযোগ থেকে বঞ্চিত থাকা ইত্যাদি কারনে এলাকার লোকজন মারাত্বকভাবে বিপদাপন্ন। উপরোক্ত সার্বিক বিষয়াদিকে বিবেচনায় নিয়ে এই এলাকাকে গবেষণার জন্য বেছে নেয়া হয়। স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সহায়তা প্রদানের উদ্দেশ্যে জলবায়ু পরির্বতন ও দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাসকরন প্রকল্প একশন এইড বাংলাদেশের সাথে দাবী মৌলিক উন্নয়ন সংস্থা; কাঁঠালতলী, নওগাঁ এর চুক্তি স্বাক্ষর হয় ১৫/০২/২০০৮ ইং সালে যা পরিচালিত হবে ৩১/০৭/২০১২ইং সাল পর্যন্ত।

প্রকল্পের মূল উদ্দেশ্য :

জলবায়ু পরির্বতন ও দুর্যোগ ঝুঁকিহ্রাস করন প্রকল্পে বাস্তবায়িত কার্যক্রম সমূহের বর্তমান অবস্থাঃ

গনগবেষনা দল সংক্রান্ত কার্যক্রম

খাবার পানির সংকট
*** নলকুপ স্থাপন ***

সিসিএ-ডিআরআর প্রকল্পের আওতায় মোট ২৬টি নলকুপ স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে গাঙ্গুরিয়া ইউনিয়নে আমদা স্কুলের টিউবয়েলটি বর্তমানে অকেজো হয়ে পড়ে আছে। তাছাড়া সবকটি টিউবয়েলই সচল আছে। তবে কোনো কোনো টিউবয়েলের অধীনে খানার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় টিউবয়েলের ওপর চাপ বেড়ে গেছে। ফলে সেসব টিউবয়েল ঘনঘন নষ্ট হচ্ছে। তবে নষ্ট হলে কমিউনিটির লোকজন তা মেরামত করে নেয়।

নলকুপ স্থাপনের ফলে যে সমস্যা সমাধান হয়েছে-
 বৎসরব্যাপি পর্যাপ্ত খাবার পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত হয়েছে।
 এলাকাবাসীর মতে পানি বাহিত বিভিন্ন রোগের প্রকোপ আগের তুলনায় কম হচ্ছে।
 নারীদের পানি সংগ্রহের হয়রানি ও পারিবারিক কলহ হ্রাস পেয়েছে।
 শুকনো মৌসুমে গোসলের সমস্যা লাঘব হয়েছে।
 নলকুপের আশে পাশে পানি দ্বারা সীমিত আকারে শাক সবজীর ফলপ্রসু উৎপাদন করা সম্ভব হচ্ছে।
 গৃহপালিত পশুপাখিকে বিশুদ্ধ পানি পানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

 কুয়া স্থাপনঃ

সিসিএ-ডিআরআর প্রকল্পের আওতায় নতুন প্রযুক্তির ৩টি কুয়াসহ মোট ১০টি কুয়া স্থাপন করা হয়েছে। এর মধ্যে বাবুপুরে ১টি, হরিপুরে ২টিও বাহারোলে ১টি কুয়ার প্লাটফরম ফেটে গিয়েছে। প্রায় সব কুয়াতেই মাঝে মাঝে পোকা দেখা যায়। বাহারোলে নতুন প্রযুক্তিতে কুয়ার ওপর স্থাপনকৃত টিউবয়েলে পানি ওঠেনা।

কুয়া স্থাপনের ফলে যে সমস্যা সমাধান হয়েছে-

টেকসই প্রযুক্তি ব্যবহারের ফলে ভুগর্ভস্থ ফোয়ারার সুপেয় পানির (লবনাক্ত মুক্ত) প্রাপ্যতা নিশ্চিত হয়েছে ও ব্যবহার বেড়েছে।গোসল ও গৃহস্থালীর কাজের উৎসরব্যাপি পানির প্রাপ্যতা নিশ্চিত হয়েছে। স্থানীয় লোকজন পুকুরের পানি পান করা থেকে বিরত থাকছেন এবং রান্নার কাজে প্রয়োজনমত পানির ব্যবহার করতে পারছেন। ভুগর্ভস্থ পানির স্তর নিশ্চিত হওয়ায় কুয়াতে পানির প্রাচুর্যতা বেড়েছে যার ফলে কুয়া থেকে পানি উত্তোলনের প্রতিযোগীতা হ্রাস পেয়েছে ফলে গ্রাম পর্যায়ে সামাজিক কলহ হ্রাস পেয়েছে।কুয়ার পানি ব্যবহারের মাধ্যমে সবজী চাষের আগ্রহ আগের তুলনায় বেড়েছে।

 পিএসএফঃ
সাপাহার উপজেলার তিলনা ইউনিয়নে হরিপুর গ্রামে ১টি পিএসএফ স্থাপন করা হয়।বর্তমানে এর ট্যাপ নষ্ট হওয়ায় পানি ঠিকমতো পরে না। মাঝে মাঝে পানি গন্ধ করে।

 ল্যাট্রিন স্থাপনঃ

সাপাহার উপজেলার বাবুপুর ও হরিপুর গ্রামে এবং পোরশা উপজেলার বাহারোল ও পশ্চিম দেউলিয়া গ্রামে মোট ৫২৪টি ল্যাট্রিন স্থাপন করা হয়। ভালো ছাউনি ও বেড়া না থাকায় অনেক ল্যাট্রিন ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে।

ল্যাট্রিন স্থাপনের ফলে যে সমস্যা সমাধান হয়েছে-
ক্স ওয়াটার সিলের পরিবর্তে ফিতা পাইপ ব্যবহার করা হয়েছে ফলে খানা ভিত্তিক পানি সাশ্রয় হয়েছে।
ক্স বাহিরে/খোলা মাঠে পায়খানা করার প্রবনতা হ্রাস পেয়েছে।
ক্স গ্রামের প্রভাবশালীরা ল্যাট্রিন স্থাপনের জন্য উদ্দ্যোগী হয়েছে।
ক্স সুফলভোগীদের মতে নিজ বাড়ীতে ল্যাট্রিন থাকার কারনে সামাজিক মর্যাদা আগের তুলনায় বেড়েছে।
ক্স মহিলা ও কিশোরীদের সামাজিক নিরাপত্তা আগের তুলনায় বেড়েছে।
ক্স মুসলমান নারীদের ক্ষেত্রে পর্দাশীলতার সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।
ক্স শুকনো মৌসুমে ডায়রিয়া সহ অন্যন্য রোগের প্রবনতা হ্রাস পেয়েছে।
ক্স বাচ্চাদের ক্ষেত্রে পায়খানাতে যাওয়ার অভ্যাস আগের তুলনায় বৃদ্ধি পাচ্ছে।


 গোসল ও গৃহস্থালী কজের জন্য পুকুর পুনঃখননঃ

গোসল ও গৃহস্থালী কজের জন্য মোট ১১টি পুকুর পুনঃখনন করা হয়। সবগুলো পুকুরই প্রত্যাশা অনুযায়ী ভালো আছে। শুধু বাহারোল রজনীগন্ধা দলের ১টি পুকুরে ঘাট না থাকায় পুকুরের পানি ব্যবহারে তাদের অসুবিধা হচ্ছে। তবে অধিকাংশ পুকুরের পাড়ে গাছ না লাগানোর কারণে পুকুর পাড়ের মাটি ক্ষয় হচ্ছে।

 কৃষি স্কিমের জন্য পুকুর পুনঃখননঃ

বাবুপুর গ্রামে ২টি ও হরিপুর গ্রামে ৩টি সহ মোট ৫টি পুকুর কৃষি স্কিমের জন্য পুকুর পুনঃখনন করা হয়। পুকুরগুলি ভালো আছে। তবে স্কীম সদস্য শিক্ষিত না হওয়ায় কমিটি দূর্বলভাবে কার্য পরিচালনা করছে।

পুকুর পুনঃখননের ফলে নি¤েœাক্ত সমস্যা সমাধান হয়েছে-
ক্স খরা মৌসুমে গোসল ও গৃহস্থালী কাজে ব্যবহারের জন্য পানির সংকট দূরীভুত হয়েছে।
ক্স বাড়ীর কাছে পুকুরের পানি ব্যবহারের জন্য কায়িক শ্রম ও সময়ের সাশ্রয় হয়েছে যার ফলে পরিবারের কাজে সময় বেশী দিতে পারছেন।
ক্স মহিলা ও কিশোরীদের নিজ গ্রামে গোসলের ফলে সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হয়েছে ।
ক্স পর্যাপ্ত ও পরিষ্কার পানি দিয়ে গোসলের ফলে খোসপাচরা ও চুলকানিসহ অন্যান্য রোগ আগের তুলনায় কম হচ্ছে।
ক্স শিশু, বৃদ্ধ, প্রতিবন্ধী, সন্তান-সম্ভবা মায়েদের প্রতিদিনের গোসল নিশ্চিত হয়েছে ।
ক্স খরার মৌসুমে পুকুরে পানি থাকার কারনে মাছ চাষের সফলতা আগের তুলনায় অনেক বেড়েছে।
ক্স পুকুরের পানি ব্যবহার করে শাকসবজী চাষের মাধ্যমে আয়ের ব্যাপক সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে।

 বসতভিটায় সবজি চাষঃ
সাপাহার উপজেলার বাবুপুর ও হরিপুর গ্রামে এবং পোরশা উপজেলার বাহারোল ও পশ্চিম দেউলিয়া গ্রামে মোট ১৯৭টি পরিবারে বসতভিটায় সবজি বাগান গড়ে তোলা হয়। বসতভিটার সর্বাধিক জায়গা ব্যবহারের মাধ্যমে ফলপ্রসুভাবে সবজী ও মসলা জাতীয় ফসল উৎপাদনের ফলে স্থানীয় নারীদের বিকল্প কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে ও তাদের পরিবারের বিপদাপন্নতা হ্রাস পেয়েছে।
 রাস্তার পার্শে বৃক্ষরোপন কর্মসূচিঃ
সাপাহার উপজেলার হরিপুর গ্রামে এবং পোরশা উপজেলার বাহারোল গ্রামে রাস্তার দুই পার্শে মোট ১২০০টি ফলজ গাছের চারা রোপন করা হয়েছে। এর মধ্যে বাহারোলে ২০-২৫টি এবং হরিপুরে ১৫-২০টি গাছের চারা খরার কারনে মারা গেছে। ব্যবস্থাপনা কমিটি সঠিক ভাবে দায়িত্ব পালন করছে না।
বৃক্ষরোপন কর্মসূচির ফলে-
ক্স পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষা হবে।
ক্স জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে স্থানীয় জনগোষ্ঠী বসবাসের ক্ষেত্রে টিকে থাকতে পারেবে।
ক্স মাটির ক্ষয়রোধ হবে।
ক্স দুর্যোগ কমবে।
ক্স দারিদ্র জনগোষ্ঠী অর্থনৈতিক ভাবে লাভবান হবে।

 পুকুর পাড়ে ঘাট স্থাপনঃ

সাপাহার উপজেলার বাবুপুর ও হরিপুর গ্রামে এবং পোরশা উপজেলার বাহারোল ও পশ্চিম দেউলিয়া গ্রামে মোট ১২টি গোসল-গৃহস্থলী কাজে ঘাট স্থাপন করা হয়। বর্তমানে সকল ঘাট প্রত্যাশা অনুযায়ী ব্যবহার হচ্ছে। তবে কোন কোন ঘাটের সিঁড়ির সংখ্যা কম হওয়ায় বয়স্ক ও ছোট ছেলেমেয়েদের ওঠা নামায় সমস্যা হয়।

 পরিবেশ বান্ধব চুলা স্থাপন ঃ

সাপাহার উপজেলার বাবুপুর ও হরিপুর গ্রামে এবং পোরশা উপজেলার বাহারোল ও পশ্চিম দেউলিয়া গ্রামে মোট ৯০টি পরিবেশ বান্ধব চুলা স্থাপন করা হয়। চুলার পাইপ চিকন হওয়ার জন্য ধোঁয়া বাহির কম হয়। পোড়া মাটির পাইপ চিকন ও ছোট হওয়ার কারনে মূখ দিয়ে ধোঁয়া বাহির হয়।

জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাত মোকাবেলায় দরিদ্র জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা অর্জনে উন্নত চুলা কার্যকরী ভুমিকা রাখতে পারবে।

 ছোলা ও তিশি চাষঃ

সাপাহার উপজেলার বাবুপুর ও হরিপুর গ্রামে এবং পোরশা উপজেলার বাহারোল ও পশ্চিম দেউলিয়া গ্রামে মোট ৫৭জন সুফলভোগীর মাঝে ছোলা ও তিশি চাষের জন্য বীজ ও সার বিতরন করা হয়। বর্তমানে ঊক্ত সুফলভোগী ছাড়াও অন্যরা এ ধরনের পানি সাশ্রয়ী ফসল চাষ করছে।

 টমেটো চাষঃ

সাপাহার উপজেলার বাবুপুর ও হরিপুর গ্রামে ১৭ জনসুফলভোগীর মাঝে টমেটো চাষের জন্য বীজ ও সার বিতরন করা হয়। বর্তমানে ঊক্ত সুফলভোগী ছাড়াও অন্যরা এ ধরনের পানি সাশ্রয়ী ফসল চাষ করছে।

 মরিচ চাষঃ

সাপাহার উপজেলার বাবুপুর ও হরিপুর গ্রামে ১৬ জন সুফলভোগীর মাঝে মরিচ চাষের জন্য বীজ ও সার বিতরন করা হয়। বর্তমানে ঊক্ত সুফলভোগী ছাড়াও অন্যরা এ ধরনের পানি সাশ্রয়ী ফসল চাষ করছে।

 বেগুন চাষ ঃ

সাপাহার উপজেলার বাবুপুর ও হরিপুর গ্রামে ০৩ জন সুফলভোগীর মাঝে বেগুন চাষের জন্য বীজ,সার ও কীটনাশক হিসাবে ফেরোমন বিতরন করা হয়। বর্তমানে ঊক্ত সুফলভোগী ছাড়াও অন্যরা এ ধরনের পানি সাশ্রয়ী ফসল চাষ করছে।

 পিঁয়াজ চাষঃ
সাপাহার উপজেলার বাবুপুর ও হরিপুর গ্রামে এবং পোরশা উপজেলার বাহারোল ও পশ্চিম দেউলিয়া গ্রামে মোট৯৪ জন সুফলভোগীর মাঝেপিঁয়াজচাষের জন্য বীজ ও সার বিতরন করা হয়। বর্তমানে ঊক্ত সুফলভোগী ছাড়াও অন্যরা এ ধরনের পানি সাশ্রয়ী ফসল চাষ করছে।

 রসুন চাষ ঃ

সাপাহার উপজেলার বাবুপুর ও হরিপুর গ্রামে এবং পোরশা উপজেলার পশ্চিম দেউলিয়া গ্রামে মোট ২০ জন সুফলভোগীর মাঝে রসুন চাষের জন্য বীজ ও সার বিতরন করা হয়। বর্তমানে ঊক্ত সুফলভোগী ছাড়াও অন্যরা এ ধরনের পানি সাশ্রয়ী ফসল চাষ করছে।

 গম চাষ ঃ

সাপাহার উপজেলার বাবুপুর ও হরিপুর গ্রামে এবং পোরশা উপজেলার বাহারোল ও পশ্চিম দেউলিয়া গ্রামে মোট ৮৬ জন সুফলভোগীর মাঝে গম চাষের জন্য ৪টি জাতের বীজ ও সার বিতরন করা হয়। গম ঊৎপাদনের প্রাপ্ত ফলাফলের মাধ্যমে দেখা যায় উক্ত ৪টি জাতের মধ্যে শতাব্দী জাতের ফলন বেশি হওয়ায় বর্তমানে ঊক্ত সুফলভোগী ছাড়াও অন্যরা এ ধরনের পানি সাশ্রয়ী ফসল চাষ করছে।

 ফুলকপি চাষ ঃ

সাপাহার উপজেলার বাবুপুর ও হরিপুর গ্রামে এবং পোরশা উপজেলার বাহারোল ও পশ্চিম দেউলিয়া গ্রামে মোট৩৫ জন সুফলভোগীর মাঝে ফুলকপি চাষের জন্য বীজ ও সার বিতরন করা হয়।কিন্তু চারা সঠিকভাবে তৈরী না করতে পারায় অনেকের আগ্রহ কমে গেছে।

 আদা ও হলুদ চাষ ঃ

সাপাহার উপজেলার বাবুপুর ও হরিপুর গ্রামে এবং পোরশা উপজেলার বাহারোল ও পশ্চিম দেউলিয়া গ্রামে মোট ৯৫ জন সুফলভোগীর মাঝে আদা ও হলুদ চাষের জন্য বীজ ও সার বিতরন করা হয়। আদা চুরি হয় বেশি । জনগন আদার চেয়ে হলুদ চাষে আগ্রহী বেশি।

 করলা ও শষা চাষ ঃ

মোট ০৬ জন সুফলভোগীর মাঝে করলা ও শষা চাষের জন্য বীজ ও সার বিতরন করা হয়। করলার চেয়ে শসা চাষের ক্ষেত্রে কৃষকেরা বেশী লাভবান হয়েছে।

 সরিষা চাষঃ

প্রকল্পভূক্ত ৪ টি গ্রামে মোট ২৫ জনকে সরিষা চাষের জন্য বীজ ও সার বিতরন করা হয়। সরিষার জীবনকাল ছোট হওয়ায় এবং ফলন আশানুরূপ হওয়ায় চাষিদের এ ধরনের ফসল চাষের আগ্রহ বেড়েছে।

 আলু চাষঃ

প্রকল্পভূক্ত ৪ টি গ্রামে মোট ৪০ জনকে আলু চাষের জন্য উন্নত জাতের সার্টিফাইড বীজ আলু ও সার বিতরন করা হয়। বিঘা প্রতি ফলন ৮০-৯০ মন হওয়ায় আলু চাষের প্রতি কৃষকের আগ্রহ বেড়েছে। উন্নত জাতের আলু যেমনঃ ডায়মন্ড/ কার্ডিনাল ইত্যাদি চাষ করে কৃষকেরা আর্থিকভাবে লাভবান হয়েছে।

 মাদা ফসলঃ

মোট ১৪৫টি খানাতে মাদা ফসল চাষের জন্য বীজ বিতরন করা হয়। বর্তমানে প্রায় প্রতিটি বাড়িতে মাদা ফসল চাষ হয়।জলবায়ু সহিষ্ণু কারিগরি কৌশল প্রয়োগের মাধ্যমে বসতভিটার অব্যবহৃত স্থানের সঠিক ব্যবহারের মাধ্যমে ফলপ্রসুভাবে ফসল উৎপাদনের সক্ষমতা বাড়ানোর মাধ্যমে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর বিপদাপন্নতা দুরীকরন সম্ভব হয়েছে।

 কম্পোষ্ট উৎপাদনঃ
রাসায়নিক সারের উপর চাপ কমাতে এবং জৈব সার উৎপাদনের লক্ষ্যে প্রকল্পভূক্ত ৪টি গ্রামে মোট ১২০ জনকে কম্পোষ্ট উৎপাদনের জন্য প্রশিক্ষণ প্রদান ও অনুদান দেয়া হয়। বর্তমানে প্রশিক্ষিত কৃষকের পাশাপাশি অন্যদের এ ব্যাপারে আগ্রহ বেড়েছে।

 বসতভিটায় ফলদ গাছ রোপনঃ

সিসিএ-ডিআরআর প্রকল্পের আওতায় প্রকল্পভ’ক্ত ৪টি গ্রামে মোট ১১৬ টি খানাতে ৬ ধরনের মোট ৮ টি করে ফলদ চারা বিতরন করা হয়। চারাগুলি বর্তমানে ভালো আছে।
ক্স বসত ভিটায় সবজী চাষের উন্নত কলা কৌশল রপ্ত করেছে যার ফলশ্রæতিতে কাংখিত মানের ফসল উৎপাদনে সক্ষমতা অর্জন করেছে।
ক্স স্বল্প পানি ব্যবহার করে খরা সহিষ্ণু ফসল উৎপাদনের উন্নত চাষ আবাদ পদ্ধতি ও কৌশল আয়ত্ব করেছে।
ক্স গবাদি পশুপাখি পালনের সঠিক ব্যবস্থাপনা কৌশল প্রয়োগের ফলে রোগ বালাই ও মৃত্যুর হার কমিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছে।

 গাভী, ভেড়া, ভ্যান, মাছ চাষ ও ক্ষুদ্র ব্যবসাঃ

বিকল্প জীবিকায়নের জন্য মোট ৪০১ টি পরিবারের মাঝেগাভী,ভেড়া,ভ্যান,মাছচাষ ও ক্ষুদ্র ব্যবসার অনুদান দেয়া হয়। বেশীরভাগ সুফলভোগীই এসব অনুদানের মাধ্যমে আগাম শ্রম বিক্রি রোধ,কাজের জন্য বাহিরে যেতে হয়না,ঋন করতে হয়না, পুষ্টির অভাব পুরন ও তিনবেলা খাবার নিশ্চিতকরনসহ তাদের জীবন যাত্রার মান উন্নয়ন করতে সক্ষম হয়েছে।

 ভেল্যুচেইন উন্নয়ন কর্মসূচীঃ
বাবুপুর ও হরিপুর গ্রামে বছরব্যাপী দুধ উৎপাদন ও স্থানীয় চাহিদা পুরন করার পর তা নায্যমূল্যে বাইরে বাজারজাতকরন করার লক্ষ্যে মিল্ক ভেল্যুচেইন উন্নয়ন কর্মসূচী হাতে নেওয়া হয়। এ ব্যবস্থায় একজন ব্যক্তিকে ভ্যানগাড়ী ও দুধ সঠিকভাবে সংগ্রহ, সংরক্ষন ও বাজারজাতকরন করার বিভিন্ন উপকরন সরবরাহ করা হয়। দুধ উৎপাদন বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে বাবুপুর ও হরিপুর গ্রামের গাভী পালনকারী সদস্যদের প্রক্ষিশন প্রদান করা হয়। বর্তমানে এ ব্যবস্থায় উৎসাহিত হয়ে পার্শ্ববর্তী গ্রাম যেমন, হোসেনডাঙ্গা, ভাগপারুল ও অরুনপুর গ্রামের বাসিন্দারা মিল্ক ভেল্যুচেইন কর্মসূচী গ্রহণ করেছে।

 প্যারাভেট উন্নয়নঃ

সাপাহার উপজেলার তিলনা ইউনিয়নের জন্য একজন ও পোরশা উপজেলার গাঙ্গুরিয়া ইউনিয়নের জন্য একজনসহ মোট দুইজন পল্লী চিকিৎসককে উপজেলা প্রাণি সম্পদ অফিসের মাধ্যমে ১৫ দিনের প্রশিক্ষন প্রদান করে প্যারাভেট হিসেবে তৈরি করা হয়। তারা প্রকল্পভুক্ত এলাকায় তাৎক্ষনিকভাবে গবাদি পশুপাখির চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে পারে।

 বিভিন্ন ধরনের কৃষি যন্ত্রপাতি প্রদানঃ

পুকুরভিত্তিক স্কীমের সুষ্ঠ পরিচালনার জন্য বিভিন্ন ধরনের কৃষি যন্ত্রপাতি প্রদান করা হয়। এ ধরনের যন্ত্রপাতি হতে প্রাপ্ত আয় দ্বারা স্কীম ও স্থানীয় জন সংগঠন পরিচালনা করা হয়।

 ইউনিয়ন পরিষদের সহিত মত বিনিময়ঃ

গাঙ্গুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান ও মেম্বারদের সহিত সংস্থার প্রধানসহ একশনএইড প্রতিনিধিগন প্রকল্পের লক্ষ্য,উদ্দেশ্য,অর্থায়ন,বাস্তবায়ন ইত্যাদি বিষয়ে এক সমন্বয় সভায় মত বিনিময় করেন।

 ফাউন্ডেশন ট্রেনিংঃ
টি রির্সোট, শ্রীমঙ্গলে “ংপধষরহম ঁঢ় ঈড়সসঁহরঃু ইধংবফ অফধঢ়ঃধঃরড়হ রিঃয খড়পধষ এড়াবৎহসবহঃ রহ ইধহমষধফবংয” শীর্ষক প্রকল্পের বুনিয়াদী প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠিত হয়। উক্ত প্রশিক্ষণে সহযোগী সংস্থার প্রধান ও কর্মকর্তাগন অংশগ্রহন করেন।

 সিসিএÑডিআরআর প্রকল্পের বাস্তবায়িত কার্যক্রম পরিদর্শনঃ
মান্দা সিসিডিবি সংস্থার ০৩ সদস্যের এক প্রতিনিধি দল এবং একশনএইড ভারত ও একশনএইড বাংলাদেশ প্রতিনিধি সিসিএÑডিআরআর প্রকল্পের বাস্তবায়িত কার্যক্রম পরিদর্শন করেন।

 মুরগীর জাত উন্নয়নের গবেষণাঃ
প্রফেসার ডঃ মো: আকতারুজ্জামান গলা ছিলা মুরগী এবং আসিল মোরগের সংকরায়নে অধিক মাংস উৎপাদনশীল জাত উন্নয়নের গবেষণা পরিদর্শন করেন। মাঠ পরিদর্শন শেষে তিনি উক্ত গবেষণার সহিত জড়িত সুফলভোগিদের ঘন্টা ব্যাপি প্রশিক্ষণ প্রদান করেন। ড:মো:নিয়াজ মাহমুদ ৩০এপ্রিল,২০১১ ইং তারিখে গলা ছিলা মুরগী এবং আসিল মোরগের সংকরায়নে অধিক মাংস উৎপাদনশীল জাত উন্নয়নের গবেষণা পরিদর্শন করেন এবং গবেষণা চলমান রাখতে করনীয় কাজের দিকনির্দেশনা প্রদান করেন। সে মোতাবেক গত ০৪-০৬-২০১১ইং তারিখে ডিম সংগ্রহের উদ্দ্যেশে রিসার্চ এবং কন্ট্রোল গ্রæপের মুরগী আলাদা করা হয় এবং সম্পুরক খাবার সরবরাহ করা হয়।
 রিফ্রেসার ট্রেনিংঃ

একশনএইড কর্তৃক আয়োজিত ২৬Ñ২৮এপ্রিল,২০১১ইং তারিখ পর্যন্ত ঢাকার আদাবওে আরআরটিসি ভবনে প্রকল্প কর্মকর্তা ও সহায়কদের জন্য রিফ্রেসার ট্রেনিং অনুষ্ঠিত হয়।

 জিজিটিÑর শেসনঃ

স্থানীয় জনগোষ্ঠির সক্ষমতা বাড়ানোর লক্ষ্যে বর্তমানে মাঠ পর্যায়ে প্রকল্প কর্মকর্তা ও সহায়কগন নিয়মিত (প্রতি সপ্তাহে ১ টি) শেসন পরিচালনা করছেন।

 জনকল্যান কেন্দ্রঃ
বিভিন্ন সামাজিক আচার অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে তিলনা জনকল্যান কেন্দ্র ভাড়ার মাধ্যমে যেকোন স্থানীয় জনগন ব্যবহার করতে পারবেন । ইঞ্জিন চালিত শ্যালো মেশিন, ফিতা পাইপ,পাওয়ার টিলার,পা চালিত ¯েপ্র মেশিন,হস্ত চালিত ¯েপ্র মেশিন, মাড়াইকল ও অন্যান্য যন্ত্রাংশ জনকল্যান কেন্দ্রে প্রদান করা হয়েছে, যা বাবুপুর ও হরিপুর গ্রামের কৃষি স্কীমে ব্যবহৃত হয়।

 মনিটরিং এ্যান্ড ইভাল্যুয়েশনঃ
কমিউনিটি পর্যায়ে সিসিএÑডিআরআর প্রকল্পের আওতায় বাস্তবায়িত বিভিন্ন কার্যক্রমের বর্তমান অবস্থা ও তার ত্রৈমাসিক ভবিষ্যত পরিকল্পনা গ্রহন করা হয়েছে এবং তদসঙ্গে প্রকল্পভুক্ত গ্রামগুলির সামাজিক মানচিত্রের উন্নয়ন বা হাল নাগাদ করা হয়েছে।

 কমিউনিটি মবিলাইজার নিয়োগঃ
পূর্বের অভিজ্ঞতা, সমাজে গ্রহণ যোগ্যতা এবং অতীত নৈপুন্য বিবেচনা করে একশন এইড বাংলাদেশ-এর পরামর্শে দাবী মৌলিক উন্নয়ন সংস্থা ১লা মে ২০১১ থেকে ৩১ শে জুলাই ২০১২ইং পর্যন্ত সিবিএ-এলজি প্রকল্পে ইউনিয়ন ভিত্তিক “কমিউনিটি মবিলাইজার” হিসেবে দায়িত্ব পালনের জন্য গাঙ্গুরিয়া ইউনিয়নে পদ্মা গণগবেষণা দলের সহায়ক ও তিলনা ইউনিয়নের গোলাপ গণগবেষণা দলের সহায়ীকাকে “কমিউনিটি মবিলাইজার” হিসাবে নিয়োগ প্রদান করছে।
 প্রাক নির্বাচনী গণসচেতনতা মূলক কর্মসূচী ঃ
সাপাহার ও পোরশা উপজেলার তিলনা ও গাঙ্গুরিয়া ইউনিয়নের প্রকল্পভূক্ত ওয়ার্ডে গত ০৯ ও ১০ জুন,২০১১ইং তারিখে যোগ্যপ্রার্থী নির্বাচন এবং ঐ ওয়ার্ডের সমস্যার তালিকা প্রতিদ্বন্দীতাকারী প্রার্থী ও স্থানীয় জনগণের সামনে তুলে ধরার জন্য স্থানীয় গণগবেষণা দলের উদ্দোগে প্রাক নির্বাচনী গণসচেতনতামূলক কর্মসূচীর আয়োজন করা হয়। উক্ত কর্মসূচীতে বিভিন্ন ধরনের লোকগান, পালাগান, নির্বাচনী গান পরিবেশনের মাধ্যমে লোকজন সমবেত করে কর্মসূচীর উদ্দেশ্য বর্ননা করেন স্থানীয় গণগবেষণা দলের প্রতিনিধিগণ।

 নব নির্বাচিত ইউপি প্রতিনিধিদের সহিত সৌজন্য সাক্ষাতঃ
গাঙ্গুরিয়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রকল্পভূক্ত ওয়ার্ডের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সহিত গত ২০-০৬-২০১১ইং তারিখে স্থানীয় গণগবেষণা দলের প্রতিনিধিগণ সৌজন্য সাক্ষাত করেন এবং ২৪-০৬-২০১১ইং তারিখে তিলনা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে প্রকল্পভূক্ত ওয়ার্ডের নির্বাচিত প্রতিনিধিদের সহিত স্থানীয় গণগবেষণা দলের প্রতিনিধিগণ সৌজন্য সাক্ষাত করেন।

 উপসংহার
দরিদ্র জনসাধারন তাদের নিজেদের সমস্যা সম্পর্কে তেমন সচেতন নয় এবং সমস্যার সমাধান কি হতে পারে তা তারা জানে না। এই প্রকল্পের মাধ্যমে গণ গবেষণা দলের সদস্যরা গবেষণা করার সুযোগ পাচ্ছেন যার মাধ্যমে তারা সমস্যার সমাধান করতে পারছেন। এই প্রকল্পের সহযোগীতায় এলাকার দরিদ্র জনসাধারনেরা গবেষণার মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে খাপ খাইয়ে নিতে ও দুর্যোগের ঝুঁকি হ্রাস করতে পারবেন বলে গণগবেষণা দলের সদস্যরা মনে করেন।